বাক্‌ ১১০ : অভিষেক ঘোষ




নিকোলাস ন্যকারনিকাস

পৃথিবী আমার ফুট দিয়ে চলে,আমার সুট চিন্তাধারায় আমাকেই বহুবার বলেছে তুমি খুব ঢ্যামনা মানুষের এক তৃতীয়াংশ ভাগ করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাও, আর জঙ্গলের গভীরে গিয়ে শালা রয়্যালটি টাকায় নিজের বাপের আবার বিয়ে দেবে ভাবছ
আর আমরা যারা ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে নাকে আরশোলা মারার স্প্রে, ইন্দিরা গান্ধীর হাসির মত ১৯৮৩র বিশ্বকাপ, কপিল দেবের পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্যচ ধরাকে মনের জোর আর কবজির আঘাত ভেবে থাকি,আমরা সকলেই গোমড়া মুখে কিছু একটা লিখতে লিখতে যখন দীর্ঘশ্বাস আর আঘাতের পর আরশোলার শুঁড়ের গন্ধ পাই, তখন খুব ইচ্ছে হয় শালা খোলস তো মানুষের চিরকালীন সম্পত্তি।
আমার একটা বাড়ি নয় এখন, আমার সাতটা বাড়ি। আমার একটা দুঃখ নয় এখন, কুড়িটা দুঃখ, আমার চুপ মেরে থাকা ছায়ারা এসব জানে,
আর এসব জানে বলেই ছায়ারা এটাও জানে যে যদি এই হারাম, এই উচ্ছিষ্ট সত্যিই এই মরা মানুষের সমাজে বসে রয়্যালটি পায়, সে কোন দিন কাউকে এক টাকা তো দেওয়া দূরের কথা পাঠকদেরও ভুলে যেতে পারে।
আর পাঠকদের ভুলে গেলে তো ভালই হয়, ভালো দুঃখ হয়, লেখা হয়। এবার আমার লেখাকে তুমি যীশু খ্রিষ্টের মত করে শুলে চাপাবে না প্রহ্লাদের মত করে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে তা কখনই আমাদের মতো নিকোলাসরা জানে না।তাদের জন্ম হয় শনিবার শনিবার আর তারা বেশিদিন বাচবে বলে লেখালিখি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় পৃথিবীর লেফট বাঁ রাইট ফুটে
গোলপোস্টে একটা একটা করে পৃথিবী জড়িয়ে যাবে, এবং আমরা সেটাকে হাতে নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে সেন্টারে বসাবো
আবার লাথি মারার জন্য।



তুমি পিছাতে পারবে না তাই, আমি এগিয়ে গেলাম

পাথর গলার ভিতর ঢুকে থাকলে, জল খেতে বলেছে ডাক্তার।
আমি ছাব্বিশ বছর ধরে কখনও ঝিনুকে,কখনও গেলাসে কখনও বোতল ধরে জল খাচ্ছি।
কিন্তু সত্যি এই পাথর আমার গলা থেকে নামেনি।
এই পাথরের জায়গায় যদি কৈ মাছের কাঁটা বা কবিতার গায়ে লেগে থাকা আঁশ, চোঁচ আমার গলায় এসে ঢুকত,
আমি এত বছরে তাদের জল দিয়ে নামিয়ে দিতাম, নয়ত সাবান ঘসে ঘসে মুছে দিতাম।
আসলে পাথর জল লাগলে নড়ে না,
আমার আঙুলের কষ্টসাধনের পরেও মরে না
পাথর সরলও না। পাথর সরল না...ও আমার গলা থেকে নেমে গেলে,
আমি কোকিলের ভো, হাঁসের স্নান আর একটা ছেলে দৌড়াইতাসে, দৌড়াইতাসে, দৌড়াইতাসের গল্প শুনতে শুনতে আমার ভালো মামার পাশে আরও একবার ঘুমিয়ে পতে চাই।
যেখানে দুপুর মানে এরম আনন্দ নয়, ও আনন্দ জানতে গেলে তোমাকেও
আমার হাত ধরে দশ বারো বছর পিছিয়ে চলে যেতে হবে।
যখন আমি বোকার মত ভাবতাম আমার গলায় নয়, বুকে অনেক অনেক পাথর আছে।
তাও তো সেই দশ বারো বছর আগের কথা,
বা তারও বেশি হতে পারে।



দুর্লভ

এখন এমন কোন দুঃখ নেই আমার যে এক ঘুষিতে জানলা ফাটিয়ে দেব। বরং অল্প অল্প ক্রোধ বেড়ে উঠছে এই কিবোর্ডটার উপর।
কত চেষ্টা করেও একটা য ফলা আর চন্দ্রবিন্দু আমি দিতে পারছি না।
আমার চাদ থেকে চন্দ্রবিন্দু উঠে যাচ্ছে, সে বেশ ভালোই, কারণ চাদ এখনও দেখা যায় আকাশে,
বরং খুব ইচ্ছে করছে মানুষ, খুব ইচ্ছে করছে সততা, খুব ইচ্ছে করছে আবিষ্কারের মাথার উপর গিয়ে তাদের,
মাঁনুষ, সঁততা এবং আঁবিষ্কার করে দি... কারণটি খুব সোজা, এখনও একা লাগলে, ছাদে উঠে গিয়ে
চাদ দেখা যায়... ও আশা করি আরও কিছু বছর যাবে...তাই আমার ভিতর থেকে,আমার কিবোর্ডের ভিতর থেকে একটা চন্দ্রবিন্দু মিসিং হলে কিছু বিরাট ক্ষতি হবে না...
তুমি পারলে, শিক্ষার উপরেরও একটা চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে দিও। আর বুদ্ধি?
তার উপর লাগাবে কিনা, আমি তোমায় ঘণ্টাখানেক পর জানাব,
আসলে ঐ শব্দটির আগে, একটা বদ শব্দ এখনও লেগে আছে তো, তাই। 



হিরোশিমার বোমায় যাদের কল্পনা শক্তি আহত হয়েছিল

দু চার হাজার বছর আগের কোন লেখাকে, নিজের বলে চালিয়ে দেওয়ার কৌশল যারা জানে না, বা জানলেও যারা মানে না, তারাই ভুলবশত অথবা ঠিকবশত ট্রিবিউট, অনুপ্রাণিত শব্দগুলি ব্যবহার করেন
ও শোয়ার ঘরে আলো জ্বালতে বলেন নিজের স্ত্রীকে।
স্ত্রী আলো জ্বালান।উনি হাতের পাশে রাখা সদ্য আসা পত্রিকাটি ওনাকে দেখিয়ে বলেন পড়লে?
উনি বলেন—না, কাল পড়ব।
কেন? আজ পড়বে না কেন? আজ তো তোমার অফিস ছুটি ছিল, রান্না করতে হয় নি, বাজারও আমি নরেন কে বলে করিয়ে দিলাম... আর এই তো মাত্র আট লাইন, এটাও তুমি আমার জন্য পড়বে না?
আজ প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে ডার্লিং...
তুমিও আজ ঘুমিয়ে পড়, আর কাল সকাল হলে তোমার ছেলেকে পড়ে শুনিয়ো তোমার লেখাটি...
আমপাতা জোড়া জোড়া...
না মোটেই আম পাতা না, শুধু ওটুকুই তো বদলেছি...
তার জায়গায় কী দিলে?
স্বামীটি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, দাঁড়াও দেখে বলছি,
আসলে ওটুকুই তো নিজের তাই মনে পছে না...  দেখে বলতে হবে।




মূর্তি নামিয়ে দেওয়ার পর

অ্যাম্বুলেন্সের আলোটি মাথার উপর নিভতেই, রাস্তাটি ছুটে গেল নার্সিংহোমের দিকে। আশপাশের জঞ্জাল ব্যক্তিত্ব থেকে,দুটি অতি প্রাচীন মাছি জানলায় এসে টোকা মারল।
স্যভলনের জলে আজ কান্না ধুয়ে, কাগজওয়ালা বেরিয়ে গেল, খবর দিতে।
সে খবর বাড়িতে বাড়িতে যাবে না...দু-তিনটে আশ্রয় ছিল তার। সেখানে খবর গেলেই কাজ শেষ।
স্ট্রেচার থেকে আরও একটি মূর্তি বেরিয়ে এলো। সারা শরীর প্রজাপতির রং দিয়ে ঢাকা...
আর বেশি নয়, হাজার কুড়ি মতো বাকি ছিল সেখানে, সব মিটিয়ে দিয়ে এলাম...
এবার শ্বাসনালীর পাশে একটা মশা মারার ধূপ জ্বালাবো। না কোন রজনীগন্ধা নেই, কোন চন্দনের অ্যারগেন্স নেই, তুলসিমঞ্চের কান্না নেই...
অ্যাম্বুলেন্সের বাইরে যে আয়নাটি আছে, তা দিয়ে আবার আমি জন্মনামক ভুল বিষয়টিকে দেখবার চেষ্টা করলাম।
সব উল্টো দেখায় এখান দিয়ে
রাস্তা ছুটতে থাকল হু হু শব্দ করে... এবার জানি, মাথার উপর আলোটি জ্বলে উঠবে, এই বিছানা এখন ফাঁকা কিছুক্ষণ...
আমি স্যালাইনের শিশিটি মাটিতে নামিয়ে, শুয়ে পড়লাম স্ট্রেচারে...
শিমুলদা বলল...ঘুমা কিছুক্ষণ, আমি খুব জোরে গান চালিয়ে দিচ্ছি, এখান থেকে আবার যাবো সেখানেই,
যেখানে.....
রজনীগন্ধার স্টিক  কিছুটা কম দামে পাওয়া যায়...


                                                                            (চিত্রঋণ : Gaspare Mutuolo)

৯৭টি মন্তব্য:

  1. "হিরোশিমা বোমায়..."- ওটা ফাটাফাটি ভাল্লাগসে।

    শেষের টা বাদে সবগুলো পড়েই ভাল লাগল। শেষেরটা আত্মস্থ হল না।

    উত্তরমুছুন
  2. sesher ta dewar kotha chilo na,,,,,,, pakami mere disi....

    উত্তরমুছুন
  3. উত্তরগুলি
    1. বেশ ভালো লাগলো সব লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগলো একটু জটিল কিন্তু অন্যরকম হিরোশিমা নিয়ে লেখাটা অসাধারণ

      মুছুন
  4. নিকোলাস ন্যকারনিকাস,হিরোসিমা আর দুর্লভ বেশ লাগলো !

    উত্তরমুছুন
  5. স্ট্রেচারে লেখা শুয়ে পড়তে নেই ...তাই স্যালাইন মেকিং প্রসেস্ টা চলে যেতে হবে ..

    উত্তরমুছুন
  6. এখনও অবধি আমার পড়া তোমার সেরা লেখাগুলোর একেকটা...

    উত্তরমুছুন
  7. প্রথমের কবিতায় তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।বাকি গুলোও বেশ, মনের মত।

    উত্তরমুছুন
  8. আসলে ওটুকুই তো নিজের তাই মনে পড়ছে না... দেখে বলতে হবে....এই আল‌োকপাত সত্য‌িই দুর্লভ। ব্যপক বলল‌েও যেন ক‌িছু বাক‌ি থেকে যাচ্ছ‌ে।

    উত্তরমুছুন
  9. ekta sorkari chakri khuje,,,,ekdom sorkari lekha likhi korbo ebar bhebechi didi...... sedino lagbe bhalo asha kori.@avishek

    উত্তরমুছুন
  10. বেশ ঝরঝরে... ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  11. আপনার সব লেখাগুলিই আমার দুর্দান্ত লেগেছে।আপনার এই লেখার সাথে অনেকটাই রিলেট করতে পারলাম বলে আরও ভাল লাগছে।

    উত্তরমুছুন
  12. আপনার সব লেখাগুলিই আমার দুর্দান্ত লেগেছে।আপনার এই লেখার সাথে অনেকটাই রিলেট করতে পারলাম বলে আরও ভাল লাগছে।

    উত্তরমুছুন
  13. আপনার সব লেখাগুলিই আমার দুর্দান্ত লেগেছে।আপনার এই লেখার সাথে অনেকটাই রিলেট করতে পারলাম বলে আরও ভাল লাগছে।

    উত্তরমুছুন
  14. ব্যাপক, অভিজিৎ

    উত্তরমুছুন
  15. ভালো লাগল । খুব ভালো উদ্যোগ ।

    উত্তরমুছুন
  16. লেখাটা পড়ার পর সন্দেহ হয় কতটা ঠিক ঠাক বুঝলাম। শুধু এটুকু বুঝলাম আমরা যারা খোলের মধ্যে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তৎপর আপনি তার বিপরীতে হেঁটে বেশ একটা হ্যাঁচকা টান মারলেন। খুব অন্যরকম অনুভূতি।

    উত্তরমুছুন
  17. পড়লাম। মনে হলো সাহসের পরিচয় দিচ্ছেন। যেভাবে লেখছেন, পাঠক কবি হিসেবে গ্রহণ করে কিনা তা নিয়ে ভাবেন নি। যা হয় হোক....জুয়াতে তো নামছিই...এরকম বিষয়...আমি বুঝতেছি না কতটুকু ভাল লাগছে। তবে নতুনকে আহ্বান করি। সেদিক দিয়ে বোধ হয় ভাল লাগার দিকেই আমার বোধ। দুর্লভ ও হিরোশিমার বোমায় যাদের কল্পনা শক্তি আহত হয়েছিল ...বেশ লেগেছে।

    উত্তরমুছুন
  18. প্রত্যেকটাই ভালো। পড়ার পর মূল্যায়ন করতে সাহস হয়না। অনেক ছোট এসবের দিকে, নিতান্তই পাঠক হিসেবে পড়ি। ভাল লাগে। ভাল লেগেছে প্রতিটাই।

    উত্তরমুছুন
  19. নিকোলাস ন্যাকারনিকাস এবং হিরোশিমার বোমায় যাদের কল্পনা শক্তি আহত হয়েছিল— ভালো লাগলো

    উত্তরমুছুন
  20. খোলস পরা আমি গোলবাড়ে পাঠানো পৃথিবী কুড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ।সস্তার রজনীগন্ধাতো চাই । ভালো ।তবে একটু গুরুপাক ,আস্তে আস্তে খেতে হবে ।

    উত্তরমুছুন
  21. বেশ ভাল লাগল।

    উত্তরমুছুন
  22. বেশ অন্যরকমের, ভাল লাগল

    উত্তরমুছুন
  23. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  24. লিখে যান অভিষেক। বেঁচে থাক পৃথিবী।।

    উত্তরমুছুন
  25. লিখে যান অভিষেক। বেঁচে থাক পৃথিবী।।

    উত্তরমুছুন
  26. ভাল লেগেছে। অন্তর্ভেদ, দ্রোহে ভরা অন্তরের নিপুণ সমালচনা কাতরতা ও পর্যবেক্ষণের ইন্টেসিটির কারণে কিছুটা পরাবাস্তবের আবির্ভাব যেন। তবে স্টাইলটি ক্লাসিক ব'লে ম'নে হয়না। অনেক শুভকামনা, আগামীতে আরও আনেক সুপাঠ্য পাবো তারই আশায় _()_

    উত্তরমুছুন
  27. Osomvob sundor akti golpo osadharon

    উত্তরমুছুন
  28. joto rajyer faltu lekha....nonsense kothakar....

    উত্তরমুছুন
  29. সব কবিতাগুলোই খুব সুন্দর ....

    উত্তরমুছুন
  30. লিখে জাও গুরু ... হিরোশিমা তুলনাহীন

    উত্তরমুছুন
  31. লেখাগুলোর ধাঁচ দারুণ লাগলো…'দুর্লভ'আমার সঁবচে ভালো লেগেছে…

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. durlav bole,,,amader paray ekta driver asto,,,jokhon ami class 12.ami tar sathe tash kheltam bole,koto lok koto kotha bolechilo......

      মুছুন
    2. ওইসব স্মৃতিগুলোই আমাদের জীবনে 'দুর্লভ'
      আমারও আছে…ওই যে বলেছেন একজায়গায়…প্রকৃত দুপুরের প্রাসঙ্গিকতা জানতে হলে আমাদের দশ পনেরো বছর পিছিয়ে যেতে হয়……

      মুছুন
    3. ha ota amar chotobelar mama r sathe ghumatam seta niye lekha....

      মুছুন
  32. এটুকু সময়ের মধ্যে কবিতাগুলো পড়ে আপনাদের কণ্ঠস্বরের সাতন্ত্রটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। কবিতাগুলো বেশ অন্যরকম ভাবনা ও ভঙ্গি বহন করে। আমার প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিলেন, এটুকু বলতে দ্বিধা নেই। ভবিষ্যতে সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর আরো কঠিন আঘাত চাই কিন্তু। তবু আলাদা করে বলতে চাই কয়েকজনের কবিতার কথা: প্রথমেই বলবো রত্নদীপা দে ঘোষ, ওনার কাছে জীবনের, সমাজের আরো অন্যদিক সম্পর্কে কবিতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। এছাড়া শানু চৌধুরী, প্রদীপ কুমার ঘোষ, অভিষেক ঘোষ ও বিশ্বরূপ দে সরকার তাঁদের কবিতার মাধ্যমে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে গিয়েছেন।

    উত্তরমুছুন